তানভীর আলাদিন :
একদিন কথা প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, তাঁর বাবা সুলতান আহম্মদ চৌধুরী আর আমার দাদা কাজি আলী নোয়াজ খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। বললেন, স্কুলে পড়ার বয়সে তিনি তাঁর বাবাসহ ফেনী শহরে এসে আমার দাদার সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। সেই সুবাদেই নাকি আমার এক চাচার সঙ্গেও তাঁর একটা বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। যদিও জীবনের বাস্তবতার কারণে তাদের মধ্যে যুগ-যুগ ধরে খুব একটা দেখা হয়নি। তারপরও তিনি আমাকে দেখলেই স্মৃতি হাতড়িয়ে স্মৃতি রোমন্থন করতেন, সবার খোঁজ-খবর নিতেন, আর বলতেন, আমার বাবার সঙ্গে মোটামুটি যোগাযোগ ছিলে এক দশক আগেও। আমাকেও ভাতিজা হিসেবে পরম স্নেহের দৃষ্টিতেই দেখতেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে গেলে, আমি নিজে কথা না বলে বা কম বলে শুধু মন্ত্রমুগ্ধের মতো ওনার কথাগুলো শুনতাম, আর নিজেকে ঋদ্ধ করে তুলতাম, তাঁকে আমার কাছে মনে হতো ইতিহাসের জীবন্ত এক পান্ডুলিপি। হয়তো আদর্শের মিল ছিলো বলেই মানুষটাকে আমার বেশি ভালো লাগতো। বলছিলাম গোলাপ চাচা মানে সদ্য প্রয়াত বর্ষিয়ান রাজনীতিবীদ, ফেনী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজ আহম্মদ চৌধুরীর কথা।
যদিও গত দুইযুগের বেশিরভাগ সময়ে আমি ফেনীর বাইরে থাকছি, তাই বিশেষ কোনো উপলক্ষ্য ছাড়া তাঁর সঙ্গে তেমন একটা দেখা হতো না। আমার সঙ্গে শেষ দেখাটা হয়েছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। সম্ভবত দিনটি ছিলো ২৪ ফেব্রুয়ারি, কথা ছিলো বিকেলে আমি আর ফেনীর বাসস প্রতিনিধি ও তৎকালীন ফেনী রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আরিফুল আমিন রিজভী যাবো জেলা পরিষদে ওনার অফিসে। কিন্তু অন্য একটা কাজে আমাদের দেরি হয়ে গেলে তিনি সন্ধ্যার দিকে বাসায় চলে গেলেন, আমাদেরকে বাসায় যেতে বললেন, বাসায় যাওয়ার পরে টানা দেড় ঘন্টা কথা হলো। সেদিনই শেষ দেখা, শেষ কথা।
তাঁর কাছে আমরা সাংগঠনিকভাবে অনেকটাই ঋণ, কারণ আমাদের ইয়ুথ জার্নালিস্টস্ ফোরাম বাংলাদেশ (ওয়াইজেএফবি)-এর বেশ ক’টা অনুষ্ঠানেই তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এমন কি ইয়ুথ জার্নালিস্টস্ ফোরাম বাংলাদেশ (ওয়াইজেএফবি)-এর আনন্দ ভ্রমণের বিশাল বহরের সঙ্গেও তিনি একাত্ম প্রকাশ করতে সামীল হয়েছিলেন। অবশ্য এই অনুষ্ঠানগুলোতে গোলাপ চাচাকে সামীল করার জন্য ধন্যবাদ পাবে দৈনিক অজেয় বাংলার সম্পাদক ও বিটিভির সাংবাদিক শওকত মাহমুদ এবং সংগঠনের ফেনী শাখার সভাপতি ও অজেয় বাংলার নির্বাহী সম্পাদক শাহজালাল ভূঞা।
বর্ষিয়ান রাজনীতিবীদ, ফেনী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজ আহম্মদ চৌধুরীর আর নেই। সম্প্রতি ৮১ বছর বয়সে তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তিনি এখন ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুর ইউনিয়নের হাসানপুর চৌধুরী বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত ।
আজিজ আহম্মদ চৌধুরী কর্মজীবনে সর্বশেষ জেলা পরিষদ ও রেডক্রিসেন্টের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছিলেন জেলা পরিষদ প্রশাসক ও আনন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। তৃণমূল থেকে উঠে আসা আজিজ চৌধুরী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, তৎকালীন ছাগলনাইয়া থানা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক, সহ-সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্যও ছিলেন তিনি। নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত শাহ আলম চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ছিলেন আমৃত্যু সভাপতি। মহান আল্লাহর দরবারে আজিজ আহম্মদ চৌধুরী (গোলাপ মিঞা) চাচার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।
# লেখক- তানভীর আলাদিন
সিনিয়র সাংবাদিক, বাসস।
সভাপতি, ইয়ুথ জার্নালিস্টস্ ফোরাম বাংলাদেশ (ওয়াইজেএফবি)।
সভাপতি, ফেনী সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকা (এফএসএফডি)।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- » রতনপুর হাজী ছৈয়দের রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের পুরস্কার বিতরণ ও সংবর্ধনা
- » চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে দুই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
- » অবশেষে অব্যাহতি , ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও ভ্রুণ হত্যার অভিযোগ
- » ফুলগাজী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন : মো. হারুন মজুমদার চেয়ারম্যান, অনিল বনিক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত
- » ফেনীতে বন্ধুর বন্ধনের ১৯তম যাকাত বিতরণ
- » ফেনীতে নানা আয়োজনে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালিত
- » ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর সাথে মাল্টিসফট আইটির সমঝোতা স্বারক চুক্তি
- » ফেনীতে যুবদলের প্রতিবাদ সমাবেশ
- » ফেনীতে টেন্ডার জমা দিতে গিয়ে হামলার শিকার ঠিকাদার
- » ফেনীতে নানা আয়োজনে জাতীয় লিগ্যাল এইড দিবস পালিত